১০ ডিসেম্বর হেরেছে সরকার, জিতেছে জনগণ

DipKantha
DipKantha
প্রকাশিত: ৫:১০ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৩, ২০২২

স্টাফ রিপোর্টার//

সরকার পতন ছাড়া বিএনপির সামনে আর কোনো বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

তিনি বলেন, ‘এত বাধাবিপত্তি, এত গ্রেফতার-তারপরও গণসমাবেশ গণসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে সরকার মনে করেছিল, বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ ব্যর্থ করে দেবে। সরকার তা পারেনি। দেশের জনগণ ও বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী শক্তি ১০ ডিসেম্বর জিতেছে। আর পরাজয়বরণ করতে বাধ্য হয়েছে সরকার।’

মঙ্গলবার বিকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তি, ৭ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পুলিশের গুলিতে মকবুল হোসেন হত্যা, মিথ্যা গায়েবি মামলা, হামলা, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পুলিশের জবরদখল করার প্রতিবাদে এ সমাবেশের আয়োজন করে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি।

বিএনপির সমাবেশে শুধু দলীয় নেতাকর্মীরা আসেনি, সাধারণ জনগণও এসেছে দাবি করে খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘জনগণ এসে বিএনপির সমাবেশ সফল করেছে। সাধারণ জনগণ এ সমাবেশগুলোর মধ্য দিয়ে বার্তা দিয়েছে, এ সরকারের হাত থেকে জনগণ মুক্তি চান। এ মুক্তি দিতে হলে জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সেই লক্ষ্যে ঢাকায় ১০ ডিসেম্বর গণসমাবেশ করেছি। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে সেখান থেকে আমরা ১০ দফা দাবি জানিয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘গত ৭ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তছনছ করে যে বর্বরতা চালানো হয়েছে, তা নজিরবিহীন। লন্ডভন্ড করেছে। সেখান থেকে সিনিয়র নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করেছে। কম্পিউটার ভেঙে ফেলছে। সবকিছু নিয়ে গেছে। এর নিন্দা জানানোর ভাষা নেই। যার লক্ষ্য ছিল ১০ ডিসেম্বর বিএনপির ঢাকা বিভাগের গণসমাবেশ পণ্ড করা। সরকার ভেবেছিল মহাসচিবসহ সিনিয়র নেতাদের গ্রেফতার করে সমাবেশ পণ্ড করবে। কিন্তু সেটা করতে পারেনি। সরকার ব্যর্থ হয়েছে। একইভাবে তারা বিভিন্ন বিভাগের গণসমাবেশ পণ্ড করতে পরিবহণ ধর্মঘট ও হামলা চালিয়ে গ্রেফতার করেছিল। তবুও গণসমাবেশ ঠেকাতে পারেনি। বরং জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছিল।’

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের বিদায়ঘণ্টা বেজে গেছে জানিয়ে বিএনপির সাবেক এ মন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগের পক্ষে দেশকে রক্ষা করা সম্ভব নয়। যারা দেশের অর্থনীতি নষ্ট করেছে, তাদের দিয়ে অর্থনীতি ঠিক করা সম্ভব না। তারা হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। দেশকে ধ্বংসের কিনারায় নিয়ে গেছে। বিদ্যুৎ খাতে লুটপাট করতে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করেছে। ব্যাংকগুলো লুট করা হচ্ছে। মানুষ আরও গরিব হচ্ছে। তারা বিচার বিভাগকে দলীয়করণ করে ধ্বংস করে দিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য, গায়ের জোরে টিকে থাকার জন্য অন্যায়ভাবে দেশের জনগণের ওপর লেলিয়ে দিয়েছে। এতকিছুর পরও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলকে দুর্বল করতে পারেনি।’

খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘বানোয়াট মামলায় খালেদা জিয়াকে বন্দি রেখেছে। তারেক রহমানকে বিদেশে থাকতে বাধ্য করেছে। আওয়ামী লীগ এত নির্যাতন করেও বিএনপিকে দুর্বল করতে পারেনি। যার প্রমাণ বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে লাখ লাখ মানুষের অংশগ্রহণ। জনগণ পরিষ্কার বার্তা দিয়েছে, এই সরকারকে চায় না। সেলক্ষ্যে আমরা যুগপৎ আন্দোলন গড়ে তুলতে ১০ দফা দাবি ঘোষণা করেছি।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের টার্গেট এই সরকারের পতন। তাই আগামী দিনে আমরা ক্ষমতাসীনদের রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করব। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেছেন, ফয়সালা হবে রাজপথে। এই রাজপথে ফয়সালা করার জন্য ব্যর্থ-ফ্যাসিবাদ-স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটানোর জন্য রাজপথে প্রস্তুতি গ্রহণ করুন। এছাড়া কোনো বিকল্প নেই।’

দুপুর ১২টা থেকেই বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে থাকেন।

এ সময় তাদের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ গ্রেফতার হওয়া সব নেতাকর্মীর মুক্তির দাবিতে স্লোগান দিতে দেখা যায়। এতে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী অংশ নেন। যে কারণে ২টায় সমাবেশ শুরুর পরপরই কার্যালয়ের সামনের এক পাশের সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে নয়াপল্টন ও আশপাশের এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।

এদিকে সকাল থেকেই কাকরাইলের নাইটিঙ্গেল মোড় ও পল্টন মডেল থানার উলটোদিকের সড়কে সাঁজোয়া যান রাখা হয়। সমাবেশ মঞ্চের পশ্চিম ও উত্তর পাশের ফুটপাতে বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়।

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব আমিনুল হক ও দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুর সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভুঁইয়া, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, আবদুস সালাম আজাদসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা।