বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে শংকা বাড়ছে
ষ্টাফ রিপোর্টার//
দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ আরও বেড়েছে। একই সঙ্গে রিজার্ভের পরিমাণও কমে যাচ্ছে। এতে বৈদেশিক লেনদেনের ঘাটতি বাড়ার কারণে ঝুঁকির মাত্রাও বেড়ে যাচ্ছে। চলমান আমদানি ব্যয়ের সঙ্গে আগে স্থগিত আমদানি ব্যয় ও বৈদেশিক ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে ব্যাংকগুলোতে ডলারের চাহিদা বেড়েছে। চাহিদা অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ডলার দেওয়া হচ্ছে না।
ফলে অনেক ব্যাংক এখন আগের আমদানির অর্থ ও বৈদেশিক ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে পারছে না। আমদানির দেনা পরিশোধের মেয়াদ বাড়ানোর পাশাপাশি ঋণ পরিশোধের মেয়াদও বাড়ানোর আবেদন করা হচ্ছে। এতে সাময়িকভাবে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট সামাল দেওয়া সম্ভব হলেও আগামীতে চাপ আরও বাড়িয়ে দেবে।
সম্প্রতি আইএমএফ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়ার কথা বলেছে। তারা বলেছে, রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে কমে যাচ্ছে। এভাবে কমে যাওয়াটা আশঙ্কার বিষয়।
সূত্র জানায়, বর্তমানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৪০০ কোটি ডলারের আশপাশে ওঠানামা করছে। এ থেকে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলসহ কয়েকটি তহবিলে বিনিয়োগ করা হয়েছে ৮০০ কোটি ডলার। এটি বাদ দিলে রিজার্ভ থাকে ২৬০০ কোটি ডলার। যা দিয়ে বর্তমানে নিয়ন্ত্রিত আমদানির মধ্যে সাড়ে চার মাসের ব্যয় মেটানো যাবে। কিন্তু এই রিজার্ভ থেকে আগে স্থগিত করা আমদানির দেনা পরিশোধ করতে হচ্ছে। একই সঙ্গে বৈদেশিক ঋণের সুদ ও মূল ঋণও পরিশোধ করতে হচ্ছে। এসব খাতের ব্যয় আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি। এ ছাড়া করোনার পর এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় বিদেশে চিকিৎসা নেওয়া, শিক্ষা ও ভ্রমণ খাতেও ব্যয় বেড়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, গত মার্চ এপ্রিলে সর্বোচ্চ ৯৫০ কোটি ডলারের এলসি খোলা হয়েছে। বর্তমানে এলসি খোলা ৫৫০ কোটি ডলারে নেমে এসেছে। আমদানি ব্যয় গত জুনে সর্বোচ্চ ৮৫০ কোটি ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। এখন তা ৬৫০ কোটি ডলারে নেমে এসেছে। আগে বৈদেশিক ঋণ ও সুদ বাবদ পরিশোধ করা হতো প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ২৫ কোটি ডলার। এখন পরিশোধ করতে হচ্ছে ৪৫ কোটি ডলার। প্রতি মাসে ভ্রমণ, চিকিৎসা ও শিক্ষা খাতে যাচ্ছে প্রায় ৪০ কোটি ডলার।
এ হিসাবে গড়ে প্রতি মাসে বৈদেশিক মুদ্রা বাবদ ব্যয় হচ্ছে ৭৫০ কোটি ডলার। এর বিপরীতে আয় হচ্ছে ৬৫০ কোটি ডলার। এর মধ্যে রপ্তানি আয় হচ্ছে গড়ে ৫০০ কোটি ডলার। রেমিট্যান্স বাবদ আসছে ১৫০ কোটি ডলার। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার প্রতি মাসে ঘাটতি থাকছে ১০০ কোটি ডলার। এ ডলার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে দেওয়া হচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে ৩ থেকে ১০ কোটি ডলার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে রিজার্ভ থেকে দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু রিজার্ভ কমে যাওয়ায় এখন ডলারের জোগান কমিয়ে দিয়েছে। ফলে ব্যাংকগুলোও দেনা শোধ করতে পারছে না।
এর মধ্যে সরকারি একটি ব্যাংক বিদেশি ঋণের ১১ কোটি ডলারের দেনা শোধ করতে পারেনি। ওই দেনা শোধের সময় বাড়ানোর জন্য আবেদন করেছে। সরকারি আরও দুটি ব্যাংক জ্বালানি তেল আমদানির দেনা শোধ করতে না পারায় এর মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করা হয়েছে। সরকারি আরও দুটি ব্যাংকের গ্যারান্টিতে বৈদেশিক মুদ্রায় একটি কোম্পানিকে দুবাইয়ের এক ব্যাংক থেকে ঋণ দেওয়া হয়েছে। ডলার সংকটে ওই দুটি ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করতে পারছে না।
ফলে দুবাইয়ের ব্যাংক সরকারি ব্যাংকের নস্ট্রো অ্যাকাউন্ট থেকে ডলার নিয়ে ঋণ সমন্বয় করেছে। এছাড়া আরও বেশ কিছু ঋণ পরিশোধ না করে এর মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।
এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সাপ্লাইয়ার্স ও বায়ার্স ক্রেডিটের ঋণে যেসব এলসি খোলা হয়েছে সেগুলো পরিশোধের মেয়াদ আগামী জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এতে আগামীতে বৈদেশিক মুদ্রার চাপ আরও বাড়বে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, আগামী জানুয়ারির পর থেকে ডলার সংকট কমে যাবে। কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম কমে এসেছে। এতে আমদানি ব্যয় কমে যাবে। এ ছাড়া বকেয়া এলসির দেনা পরিশোধের চাপও কমবে।
রিজার্ভ গত বছরের আগস্টে সর্বোচ্চ ৪৮০৬ কোটি ডলারে উঠেছিল। এরপর থেকে তা নামতে থাকে। এখন তা ৩৪০০ কোটি ডলারে অবস্থান করছে।
রিজার্ভ বাড়াতে রেমিট্যান্স বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। হুন্ডি বন্ধ করে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে রপ্তানি আয় বাড়ানো এখন চ্যালেঞ্জিং মনে করছেন উদ্যোক্তারা। কারণ বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান বাজারগুলোতে মন্দা চলছে। ফলে রপ্তানির আদেশ কমে গেছে। একই সঙ্গে রপ্তানি শিল্পের কাঁচামাল আমদানির ব্যাক টু ব্যাক এলসি খোলাও কমেছে ২৯ শতাংশ।