মানুষের উত্তম ব্যবহার ও আচরণ- অধ্যাপক শামসুল হুদা লিটন

DipKantha
DipKantha
প্রকাশিত: ১:১৯ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১৬, ২০২২

মানুষের উত্তম ব্যবহার ও আচরণ

অধ্যাপক শামসুল হুদা লিটন//

মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত। সৃষ্টির সেরা জীব। সেরা জীব হিসেবেই মূল্যবোধে উজ্জীবিত থাকবে মানুষ। মানুষের মধ্যে থাকবে মানবিক গুণাবলী। আর পশুর মধ্যে থাকবে পাষবিকতার বৈশিষ্ট এটাই স্বাভাবিক।
সদাচারের গুরুত্ব ও তাগিদ দিয়েছে ইসলাম সহ পৃথিবীর সকল ধর্ম।
মানুষ তার উত্তম ব্যবহার, আচরণ ও উত্তম চরিত্র দ্বারা ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে করে আলোকিত। কিন্ত আচার, ব্যবহার, শিষ্টাচার শব্দগুলো বইয়ের পাতায় থাকলেও আমাদের ব্যক্তি জীবনে এর প্রকাশ,ব্যবহার সম্পর্কে আমরা কতটুকু সচেতন। এসবের অনুপস্থিতিতে এর বিরুপ প্রভাব লক্ষনীয়। আজ সমাজের নানা স্তরে এর ঘাটতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এর ফলে দিন দিন অবক্ষয়ের পথে ধাবিত হচ্ছে সমাজ।
মানুষের আচরণ নিয়ে, মানুষের অনৈতিক আচরণ নিয়ে আচরণবাদীরা আজ বড়ই উদ্বিগ্ন। সমাজ চিন্তকরা বড়ই হতাশ। মানুষের শিষ্টাচার, আচার- আচরণের মতো অভ্যাসগুলো ছোটকাল থেকেই রপ্ত করতে হয়ে। পারিবারিকভাবে চর্চা করেই লাভ করতে হয়। সমাজ থেকে শিখতে হয়ে। আচরণবাদীরা বলেন,” শিষ্টাচার হচ্ছে কিছু অভ্যাসের সমষ্টি।”
যার হৃদয় যত পবিত্র ও কলুষমুক্ত- তিনি তত কোমল ব্যবহারের অধিকারী হন, তিনি হন সদা হাস্যোজ্জ্বল চেহারা অধিকারী। পৃথিবীতে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর চেয়ে পবিত্র মন, আকর্ষণীয় আচরণের অধিকারী আর কোনো ব্যক্তির আগমন ঘটেনি এবং ভবিষ্যতেও ঘটবে না।

নবী করীম (সা.) সব সময় হাসিমুখে থাকতেন। সঙ্গী-সাথীদের সাথে সাক্ষাৎ হওয়ামাত্র হাসিমুখে অভ্যর্থনা করতেন, কিন্তু জীবনে কেউ কোনোদিন তাঁকে অট্টহাসি হাসতে দেখেনি। প্রবল হাসির উদ্রেক হলে কখনও কখনও বিদ্যুৎ চমকের মতো একফালি দাঁতের ঔজ্জ্বল্য ফুটে বের হত।

হযরত মুহম্মদ (সা.) মানুষের সাথে সাক্ষাতের সময় হাসিমুখে সম্ভাষণ করেছেন। অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে সাক্ষাৎকারীর কথা শুনেছেন।
ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর (রাঃ)এর উট চালকের সাথে পরিশ্রম ভাগ করে নেয়ার কাহিনী আমরা জানি।
চারিত্রিক সৌন্দর্য দ্বারা মানুষের ভালোবাসা ও সম্মান হাসিল করা যায়। গোমরামুখী হওয়া কোনো তাকওয়ার পরিচয় বহন করে না। ব্যক্তিগত জীবনে দেখা যায় অনেক সৎ চরিত্রের অধিকারীদের চরিত্রে কোমলতা কম থাকে, মেজাজ থাকে কিছুটা কর্কশ। মুমিনের এমন চরিত্র হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়। কিয়ামতের দিন এমন লোককেও আল্লাহর সামনে হাজির করা হবে- যার আমলনামার মধ্যে নামাজ, রোজা, জাকাত প্রভৃতি নেক আমল থাকবে। কিন্তু বিভিন্ন ব্যক্তি তার মন্দ আচরণের জন্য আল্লাহর কাছে নালিশ করবে।
তাই প্রত্যেক পরিবারের কর্তা, স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, বিশ্ববিদ্যায়ের প্রধান কর্মকর্তাকে মিষ্টি হাসি, মধুর আচরণ ও কোমল চিত্তের অধিকারী হওয়া একান্ত প্রয়োজন। আমাদের বিশ্ব নবী হযরত মুহম্মদ (সা.) ছিলেন এমন সব বৈশিষ্ট্যের অধিকারী।

মধুর চরিত্রের অধিকারী ও মিষ্টভাষীদের জন্য জান্নাতের সুখবর রয়েছে পবিত্র হাদিসে। এ বিষয়ে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে কথাটি প্রকৃতই মিথ্যা এবং অসঙ্গত, যে ব্যক্তি তা বলা এবং আলোচনা করা পরিত্যাগ করে- তার জন্য জান্নাতের কিনারায় স্থাপনা নির্মিত হয়। যে ব্যক্তি সঙ্গত কারণ থাকা সত্ত্বেও ঝগড়া-বিবাদ পরিত্যাগ করে, তার জন্য জান্নাতের মধ্যে বাসস্থান নির্মিত হয়। যে ব্যক্তি বাক সংযম, মিষ্টভাষণ এবং সত্য কথা প্রভৃতি গুণ দ্বারা নিজের চরিত্র সৌন্দর্যমন্ডিত করে, তার জন্য জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থানে রস একবারেই নেই, সাধারণ মানুষ তেমন জীবনকে আদর্শরূপে গ্রহণ করতে পারে না। কিন্তু হাসি-তামাশা যেন ভব্যতার সীমা ছাড়িয়ে না যায় সে জন্য সূক্ষ্ম রসবোধ ও আত্ম সংযম থাকা দরকার।

নীরবতা, নির্জনতা, স্থির ও সমাজবিচ্ছিন্ন একক জীবন ইসলাম নয়। দয়া, নম্রতা, নরম মেজাজ ও ব্যবহারের মাধ্যমে পরিবার, প্রতিবেশী ও সমাজের মানুষের সাথে হাসি মুখে, হাস্যোজ্জ্বল চেহারা নিয়ে মিশতে হবে। তাদের সঙ্গে কোমল আচরণ করতে হবে। আর এসব যেন লোক দেখানোর না হয়- সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।

সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে প্রতিবেশীর সাথে সুন্দর আচরণ করা ঈমানের অন্যতম শিক্ষা। তাই সর্বাবস্থায় সর্ব স্তরের মানুষের সাথে ভদ্র আচরণ করা ঈমানদার ব্যক্তির কর্তব্য। সেই মানুষটি যে পর্যায়েরই হোক না কেন।
ভালো আরণ সওয়াবের কাজ। ভালো ব্যবহার দেখে ভালো মানুষ চেনা যায়। আচরণের মাধ্যমেই ব্যক্তি মানুষের তাকওয়া, ব্যক্তিত্ব ফুটে উঠে। যে সব মানুষের আচার ব্যবহারে মানুষ কষ্ট প পায় তারা কখনো শ্রেষ্ঠ মানুষ হতে পারেনা। শ্রেষ্ঠ মানুষের আচরণে মুগ্ধ হয় মানুষ, উপকৃত হয় সমাজ। উন্নত আচরণের অধিকারী মানুষগুলো সমাজের সম্পদ। আর ওরাই জান্নাতি মানষের প্রতিচ্ছবি।

লেখকঃ
অধ্যাপক শামসুল হুদা লিটন
সাংবাদিক, কলামিস্ট, কবি ও গবেষক।