ডক্টর মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ’র “ভবিষ্যতের মানুষ” — অধ্যাপক শামসুল হুদা লিটন

DipKantha
DipKantha
প্রকাশিত: ৫:৪০ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ২৭, ২০২২

ডক্টর মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ’র “ভবিষ্যতের মানুষ”

——–অধ্যাপক শামসুল হুদা লিটন

ডক্টর মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ উপমহাদেশের সর্বকালের সর্ব যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষাবিদ,
ভাষাবিজ্ঞানী, ভাষা গবেষক। তিনি বিরল ও বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। ডক্টর মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ একাধারে ছিলেন বহু ভাষার পন্ডিত, জ্ঞানতাপস, শিক্ষাবিদ, শিক্ষাগুরু, বাংলা ভাষা আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব। ভাষা ও ভাষাতত্বে ছিলো তাঁর অগাধ পাণ্ডিত্য। এর পাশাপাশি তিনি ছিলেন সমাজ ও রাজনীতি সচেতন এক মহান ব্যক্তি। জাতি গঠনের কারিগর হিসেবে তাঁর চিন্তা, গবেষণা ও দূরদর্শিতা আমাদের জীবন পথের পাথেয়। ভাষা ও সাহিত্যের পাশাপাশি তিনি ছিলেন সমাজ ও রাষ্ট্রচিন্তক। তাঁর বিভিন্ন লেখার মাধ্যমে তা স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে।
একসময় কলেজ পর্যায়ে উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পাঠ্য বইতে ডক্টর মুহাম্মদ
শহীদুল্লাহ’র একটি প্রবন্ধ ছিল। সেই প্রবন্ধের নাম ছিল
“ভবিষ্যতের মানুষ”। প্রযুক্তির যুগান্তকারী উদ্ভাবনের সঙ্গে সঙ্গে ভবিষ্যতের মানুষের অবয়ব, তার আকার-আকৃতি,
আচার- আচরণ, প্রকৃতি, কেমন হবে, কীভাবে ভবিষ্যতে মানুষের আচার- আচরণ বদলে যাবে তার একটা সরসন বর্ণনার মাধ্যমে ভবিষ্যতবাণী লিপিবদ্ধ করেছেন সেই প্রবন্ধে ।

ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্‌ “ভবিষ্যতের_মানুষ” প্রবন্ধে লিখেছিলেন, ভবিষ্যতের মানুষদের মাথা থাকবে বড়। কারণ তারা মাথা খাটাবে বেশি। তাদের হাত-পা থাকবে ছোট, পেট থাকবে ছোট। কারণ তারা কায়িক শ্রম করবে না। এ কারণে তারা খাবেও কম। শুধু আঙুলগুলো বড় থাকবে। আঙুল বড় হবার কারণ হলো তারা প্রযুক্তির যন্ত্র টেপাটিপি করবে।
ডক্টর মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ বৃটিশ আমলে ১৮৮৫ সালের ১০ জুলাই পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগণা জেলার বশিরহাট মহকুমার পেয়ারা গ্রামে জন্ম গ্রহণ করে ছিলেন। তিনি ১৯৬৯ সালে ঢাকায় ইন্তেকাল করেন। তাঁর জীবদ্দশায় ডিজিটালের ছোয়া লাগেনি। ডক্টর মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ ডিজিটাল বাংলাদেশও দেখে যেতে পারেননি। কিন্তু তিনি দূরদর্শী ছিলেন। এক সময় আঙুল বেশি কাজে লাগবে, আঙুলের ব্যবহার বেড়ে যাবে এটা কিন্তু তিনি ভালো করেই আঁচ করত পেরেছিলেন। বিংশ শতাব্দীতে বসে তিনি একবিংশ শতাব্দীর মানুষের ডিজিটাল পদ্ধতি আবিষ্কার ও আসক্তির বিষয়টি খুব ভালোভাবেই অনুভব করতে পেরে ছিলেন। ভবিষ্যতের মানুষ সম্পর্কে তিনি যে ভবিষ্যদ্বাণী করতে পেরেছিলেন, তা তাঁর দূরদর্শিতারই প্রমাণ।
এখন সবচেয়ে বেশি কাজে লাগে বুড়ো আঙুল, স্মার্টফোনে টেক্সট বার্তা লেখার জন্য।নতুন প্রজন্মের মানুষের দিকে তাকালেই দেখা যায় যে, তারা দুই বুড়ো আঙুলে এত দ্রুত টাইপ করছে যে মুষলধারে বৃষ্টিও এতো জোরে পড়ে না। তরুণ প্রজন্মের লোকজন এখন দু হাতের আঙুলের সাহায্যে কম্পিউটার, ল্যাপটপ, এন্ড্রয়েড মোবাইল সেট চালনায়ই যেন মহা ব্যস্ত। খাওয়া- দাওয়া ভুলে গিয়ে ফেসবুকের নেশায় মত্ত হয়ে আছে। দিন-রাত আঙুলের টেপাটেপি যেনো ওদের কাজ।

একসময় বই বলতে বুঝাতো
কাগজের বই। পরবর্তী সময়ে লোকে সিনেমাকে বই বলতে শুরু করলো! হালআমলে, ডিজিটাল যুগে বই মানে বুক আর বুক মানেই ফেসবুক।
আগে স্ট্যাটাস মানে ছিল সামাজিক মর্যাদা। এখন স্ট্যাটাস মানে ফেসবুকের স্ট্যাটাস। ডক্টর মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ,র ভবিষ্যতের মানুষেরা আজ টেপাটেপির যন্ত্রের সাথে একাকার হয়ে গেছে। তাঁর ভবিষ্যতের মানুষগুলো যেন খুবই যান্ত্রিক হয়ে ওঠেছে। ডক্টর মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ ভবিষ্যতের মানুষের সাথে ডিজিটাল যুগের মানুষের যেনো কতদিনের মিতালী। এমন দূরদর্শিতার জন্য সালাম হে জ্ঞান তাপস। তোমাকে হাজারো সালাম।
লেখকঃ
শামসুল হুদা লিটন
অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান
তারাগঞ্জ স্কুল অ্যান্ড কলেজ,
সাধারণ সম্পাদক
কাপাসিয়া প্রেসক্লাব।