ভোলায় ৯টিতে নৌকা ও ৩টিতে বিদ্রোহী প্রার্থী বিজয়ী
![](https://dipkantha.com/wp-content/uploads/2022/01/IMG_06012022_170806_622_x_420_pixel-1.jpg)
![](https://dipkantha.com/wp-content/plugins/print-bangla-news/assest/img/print-news.png)
এম শরীফ হোসাইন //
ভোলায় ৯টিতে নৌকা ও ৩টিতে বিদ্রোহী প্রার্থী বিজয়ী হয়েছে। গতকাল ৫ জানুয়ারি ২০২২ এর পঞ্চম ধাপের ইউপি নির্বাচনে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনার মধ্য দিয়ে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে নারী ভোটারদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। এ নির্বাচনে ১২টি ইউনিয়নের ১শ ৩৯টি কেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা ছিল প্রায় ৩ লাখ।
সকালের দিকে ভোট কেন্দ্রে পরিবেশ শান্ত থাকলেও সময় বাড়ার সাথে সাথে উত্তপ্ত হতে থাকে পরিবেশ। আধিপত্ত বিস্তার করা নিয়ে সদর উপজেলার আলীনগর, পূর্ব ইলিশা, বাপ্তা, রাজাপুর, চরসামাইয়া, ভেলুমিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ৩০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে ১০জন ভোলার ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে মাঠে তৎপর দেখা গেছে। এছাড়া ভোট কেন্দ্রের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ১০ জনকে আটক করে। পরে তাদেরকে জেল-জরিমানা প্রদান করা হয়। ভোট গণনা শেষে বেসরকারীভাবে ভোলার ১২ ইউপির মধ্যে ৯টি তে আওয়ামী লীগের নৌকর প্রার্থী ও ৩টি-তে বিদ্রোহ প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন।
নির্বাচন উপলক্ষে কাক ঢাকা ভোর থেকে-ই কেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। সকালের দিকে কুয়াশাচ্ছন্ন পরিবেশ থাকলেও তা উপক্ষো করে ভোটাররা ভোট কেন্দ্রেগুলোতে আসতে থাকেন। সকাল ৮টায় ভোট আরম্ভ হওয়ার আগেই তারা লাইনে লাইনে দাড়িয়ে যান ভোট প্রদান করার জন্য। সুষ্ঠ পরিবেশের মধ্য দিয়ে-ই সকাল ৮টায় ভোট শুরু হয়। ভোটাররাও তাদের পছন্দের প্রার্থীদের ভোট প্রদান করেন। সকালের দিকে সুষ্ঠ পরিবেশে ভোট দিতে পেরে তারাও সন্তোস প্রকাশ করেন।
পশ্চিম ইলিশা ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের মহিলা ভোট কেন্দ্রের সালেহা বেগম নামের এক নতুন ভোটারের সাথে কথা হয়, তিনি জানান, জীবনের প্রথম ভোট দিতে এসেছেন তিনি। এখন পর্যন্ত সুষ্ঠ পরিবেশ থাকায় কোন সমস্যা হচ্ছে না ভোট দিতে। সবাই যে যার মত ভোট দিচ্ছেন।
কথা হয় আরেক ভোটার হালিমা খাতুন ও নাসিমা বেগমের সাথে। তারাও বলেন, আমরা আমাদের ভোট দিতে পেরে আনন্দিত। তবে তারা একটু অভিযোগ করেন ভোট দিতে এসে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। যারা ভোট নিচ্ছেন তারা একটু ধীর গতিতে ভোট নিয়েছেন। তাদের এ হেয়ালিপনার কারণে অনেক বৃদ্ধদের দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হয়েছে।
তবে সকাল গড়িয়ে যখন দুপুর হয় তার পর থেকেই উত্তপ্ত হতে থাকে ভোলার নির্বাচনী মাঠ। এ সময় আধিপত্ত বিস্তার করা নিয়ে চেয়ারম্যান প্রার্থী, সাধারণ সদস্য এবং সংরক্ষিত মহিলা সদস্যদের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। দুপুরের দিকে বাপ্তা ইউপির চরনোয়াবাদ এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করা নিয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। একই সময়ে ভেলুমিয়াতে বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষ বাধে। বিকেলের দিকে পূর্ব ইলিশাতেও আধিপত্য বিস্তার করা নিয়ে সংঘর্ষ হয়। এ সময় দুই গ্রুপের মধ্যে চলমান সংঘর্ষ আধাঘণ্টা ব্যাপী স্থায়ী হয়। এসময় এক গ্রুপ অপর গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলতে থাকে। ইট-পাটকেল নিক্ষেপ, লাঠি-সোটা এবং দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিতেও দেখা গেছে। এছাড়া চরসামাইয়া এবং রাজাপুরেও আধিপত্য বিস্তার করা নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তবে বিকেলের দিকে ভোলার আলীনগর ইউনিয়নে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট এর ভ্রাম্যমান টিমের সঙ্গেও সংঘর্ষ বাধে। এসময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কয়েকরাউন্ড ফাকা গুলি ছোড়ার খবর পাওয়া গেছে। দুপুরের পর থেকে বিকেল পর্যন্ত থেমে থেমে বিভিন্ন জায়গায় সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে ১০জন ভোলার ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। অন্যদিকে ভোটের মাঠের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ছিল তৎপর। তারা ভোটের মাঠে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা কালে ১০ জনকে আটক করেছে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। বিভিন্ন অনিয়ম আর অপরাধের কারণে ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটগণ আটককৃতদের মধ্য থেকে ১ জনকে ১৫ দিনের কারাদন্ড এবং ৯ জনকে ৬৬ হাজার টাকার জরিমানায় ছেড়ে দেন।
এ ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার মধ্য দিয়ে বিকাল ৪টায় শেষ হয় ভোট। গণনা শেষে ভোলার ১২টি ইউপি’র মধ্যে বেসরকারীভাবে ৩টি-তে স্বতন্ত্র এবং ৯টি-তে আওয়ামীলীগ মনোনিত নৌকা প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। বিজয়ী প্রার্থীরা হলেন ১নং রাজাপুরে স্বতন্ত্র প্রার্থী রেজাউল হক মিঠু চৌধুরী (মোটরসাইকেল), ২নং পূর্ব ইলিশায় স্বতন্ত্র প্রার্থী আনোয়ার হোসেন ছোটন (আনারস), ৩নং পশ্চিম ইলিশায় জহিরুল ইসলাম (নৌকা), ৫নং বাপ্তায় ইয়ানুর রহামান বিপ্লব মোল্লা (নৌকা), ৬নং ধনিয়ায় এমদাদ হোসেন কবির (নৌকা), ৭নং শিবপুরে জসিম উদ্দিন (নৌকা), ৮নং আলীনগরে বশির আহমেদ (নৌকা), ৯নং চরসামাইয়ায় মহিউদ্দিন মাতাব্বর (নৌকা), ১০ নং ভেলুমিয়ায় আব্দুস সালাম মাষ্টার (নৌকা), ১১নং ভেদুরিয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী মোস্তফা কামাল (আনারস), ১২নং উত্তর দিঘলদীতে লিয়াকত হোসেন মনসুর (নৌকা), ১৩নং দক্ষিণ দিঘলদীতে ইফতারুল হাসান স্বপন (নৌকা) প্রতীকে নির্বাচিত হন।