“শেখ কামালকে যেমন দেখেছি” – অধ্যক্ষ ফারুকুর রহমান
![](https://dipkantha.com/wp-content/uploads/2021/08/IMG_30082021_145223_622_x_420_pixel.jpg)
![](https://dipkantha.com/wp-content/plugins/print-bangla-news/assest/img/print-news.png)
শেখ কামালকে যেমন দেখেছি-
১৯৭৩ সালের মাঝ নাগাদ কলকাতায় বাংলাদেশ-ভারত
মৈত্রী মেলায় একটি নাটক মঞ্চস্থ করবার জন্যে অনুরোধ
পত্র আসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে। এটির
সম্ভাব্যতা নিয়ে আলোচনার জন্যে ছাত্র শিক্ষক মিলনায়তন কেন্দ্রে আলোচনা। ড. নিলীমা ইব্রাহিম, প্রফেসর রফিকুল ইসলাম ও প্রফেসর মোহাম্মদ মনিরুজ্জমান সহ উপস্থিত বিশ্ব বিদ্যালয়ের কয়েকজন
নাট্যোৎসাহী ছাত্র ছাত্রী। এমন সময় এলেন শেখ কামাল।
রফিক স্যার তাঁকে সকলের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন এবং
বলেন, শেখ কামাল কলকাতা যাবেন এবং অভিনয় করবেন আমরা সকলে বিষয়টিকে দারুন ইতিবাচক হিসেবে দেখলাম, খুশি হলাম সকলে। শেখ কামাল অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে আমাদের সকলকে লক্ষ্য করে বললেন, আমি ইতিপুর্বে কখনো নাটক করিনি তবে আশা
আছে আপনারা সহযোগীতা করলে আমি পারবো। সকলের সামনেই রফিক স্যার আমাকে বললেন, সংলাপ
প্রক্ষেপন ছাড়াও উচ্চারন গুলি একটু ঠিক করে দিও। মনে
হলো একরকম ছুটে এসে কামাল আমায় জড়িয়ে ধরে
বলেন, বস্ আপনিআমার বস্ হলেন। ১০/১২ দিন মহড়া
শেষে কলকাতা যাই। ওখানে আমরা দু’জন একই ঘরে
থাকি এবং গভীর রাত পর্যন্ত তাঁকে তালিম দেই। মাঝে মাঝে দুষ্টুমি করে বলতাম বঙ্গবন্ধুর বক্তৃতা শুনাও নইলে আজ আর পারবোনা , তাৎক্ষনিক ভাবে দাড়িয়ে বঙ্গবন্ধুর সেই অমোঘ বক্তৃতা “আর যদি একটা গুলি চলে আর যদি আমার লোকদের এইভাবে হত্যা করা হয় “….. শুনিয়ে দিতেন । আমি আবার আমার কাজ শুরু করতাম । আমরা কোলকাতা পৌঁছার ৪ দিন পর নাটক মঞ্চস্থ হলো। (বলতে ভুলে গিয়েছিলাম এই নাটকে আমাদের সঙ্গে প্রখ্যাত বরেন্য অভিনেত্রী ফেরদৌসি মজুমদার অংশগ্রহন করেছিলেন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকায় )
নাটক শেষে চলে এলাম আবাসস্থলে ।অংশগ্রহনকারী সকলের মধ্যেই একটা খুশির বন্যা বয়ে গিয়েছিলো সকলেরই ধারনা তাদের নিজ নিজ অভিনয় সুন্দর হয়েছে । কামাল চুপিসারে আমাকে জিজ্ঞেস করে, বস্ আমাকে কিছু বলছেন যে আমার অভিনয় কেমন হয়েছে ? আমি কামালকে সজোরে বুকের মধ্যে ঝাপটে ধরে বললাম তুমি চমৎকার অভিনয় করেছো কেউ ভাবতেই পারেনি যে তুমি এত সুন্দর অভিনয় করবে । পরের দিন কলকাতার জনপ্রিয় দুটি পত্রিকায় ‘যুগান্তর ‘ ও ‘অমৃতবাজারে ‘ বড় করে ছাপা হয় নাটকের সংবাদ প্রথম পৃষ্ঠায়। সংবাদের শিরোণাম ছিলো রণাঙ্গন থেকে নাট্যমঞ্চে । এই পাতায়ই ছবি ছিলো শেখ কামাল , আব্দুল কুদ্দুস মাখন, এস এম মহসিন ও আমার ।আমাদের সকলের মধ্যে একটি কথাই বেশি আলোচিত হয়েছে কামালের মধ্যে কোন দাম্ভিকতা নেই নেই কোন অহমিকা ভদ্র সাদা মাটা এক তরতাজা যুবক । শিল্প ,সাহিত্য ,সংস্কৃতি ও খেলাধুর প্রতি ঝোঁক ছিলো বেশি। এগুলিই ছিলো তার প্রান । তারপরে চলে এলাম ঢাকা । ইতিমধ্যে বেরিয়ে গেলো রেজাল্ট পাশ করলাম ভালো ভাবেই।
একদিন নিলীমা আপা তাঁর ঘরে আমাকে ডেকে নিয়ে বলে বাংলা একাডেমিতে কাজ করবে ? এখানে বলে রাখা ভালো যে ডা. নিলীমা ইব্রাহীম বাংলা বিভাগীয় প্রধান এ ছাড়াও বাংলা একাডেমির পরচালিকার দায়িত্ব পালন করে । আমি নিম্নস্বরে বিনীত ভাবে আপাকে জানাই যে আমি ভোলারই একটি কলেজে বাংলায় শিক্ষকতা করবো।আপা বললেন ঠিক আছে । এর তিন চার দিন পরেই বিশ্ববিদ্যালয়র কলাভবনের সামনে শেখ কামালের সাথে দেখা হতেই আমাকে বলে বস্ পাশ করলেন চাকরি করবেন না ? আমি তাঁকে অত্যন্ত বিনীত ভাবে তাই বলেছি যা নিলীমা আপাকে বলেছি । চলে এলাম ভোলা এবং জনাব তোফায়ল আহমেদের সুপারিশে বাংলায় অধ্যাপনা শুরু করলাম তাঁরই প্রতিষ্ঠিত শেখ ফজিলতুন্নেছা মহিলা কলেজে । এভাবেই আমার দিন চলে যাচ্ছিল কোন রকমে । দিন যায় দিন আসে সেভাবেই এসেছিলো বংলায় ১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগস্ট । সকাল , কিন্তু এ কোন সকাল ? যা রাতের চেয়েও অন্ধকার । বঙ্গবন্ধু নেই তাঁর পরিবার নেই বুলেটের আঘাতে ঝাঁঝরা করে দিয়েছিলো বঙ্গবন্ধুকে ঘাতকের দল । স্বাধীনতার স্থপতি স্বাধীনতার নির্মাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজ আর আমাদের মধ্যে নেই ।