কোরবানির পশু নিয়ে দুশ্চিন্তায় খামারিরা
মোঃ মিরাজ হোসাইন//
ভোলা দৌলতখানের গরু ব্যবসায়ীদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ব্যবসায়ী সারা বছর গরু লালন-পালন করেন ঈদুল আযহাকে টার্গেট করে অধিক লাভবান হওয়ার আশায়। গরুর অনেক মালিক আছেন যাদের প্রতিদিনের গোখাদ্য ক্রয় করার সামর্থ ও নেই । তারপরও ধার-দেনা করে গরু পালন করছেন । কিন্তু এবার প্রত্যাশিত মূল্য পাবেন কি না এই দুশ্চিন্তায় আছেন তারা। ধারণা করা হচ্ছে গত বছরের তুলনায় কয়েক গুণ কমবে এবার ঈদুল আযহার পশু কোরবানী। অন্যান্য বছরে মানুষ ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে ঈদুল আযহা পালন করতেন। করোনার কারণে গেল বছরের মত এবারো সেরকম হবে না বলে মনে করা হচ্ছে। বিশাল একটি জনগোষ্ঠী আর্থিকভাবে সংকটের মধ্যে নানা দুঃখ দুর্দশায় দিন কাটাচ্ছেন। তারা এবার পশু কোরবানির কথা ভাবতেই পারছেন না। মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্ত যারা একাধিক পশু কোরবানি দিতেন তারা অনেকেই এবার পশুসংখ্যা কমাবেন। অনেকে আবার করোনাজনিত কারণে পশুহাটে যেতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন না। সব মিলিয়ে এবার পশুর চাহিদা থাকবে কম। সঙ্গত কারণেই এবার সারাদেশে পশুহাটের সংখ্যা কমেছে। আগ্রহী ইজারাদাররা হাটের ইজারামূল্যও কমিয়ে দিয়েছেন।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় সারা দেশে সর্বাত্মক লকডাউন চলছে। লকডাউন পালনে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে রয়েছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় মানুষ অর্থনৈতিক সংকটে দিন পার করছেন। এমন পরিস্থিতিতে অনেকেই পশু কোরবানি দিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না । তবে অনেকেই ধারনা করছেন এবার খাসির বাজার গরুর চেয়ে অনেকটাই ভালো যেতে পারে।
দৌলতখানের গরু ব্যবসায়ী মোঃ জাকির জানান, গত বছর কোরবানির পশু হাটগুলোতে প্রচুর পরিমাণ গরু অবিক্রীত ছিল। এবার আগে থেকেই বোঝা যাচ্ছে, অনেকেই কোরবানি দিতে পারবেন না। কারণ, অনেকে এখন চাকরিহীন, নিম্নবিত্তরাও কর্মহীন।
খামারি হাবিবুর রহমান ফয়সাল বলেন, এখন বাজার খুবই খারাপ। আমার নিজের পালন করা গরু আছে ২২টি। ৮ মণ করে মাংসের ওজন হবে- এমন গরু আছে দশটি। প্রতিটি গরু এবার ২লাখ টাকায় বিক্রির আশা ছিল। কিন্তু করোনার প্রকোপ প্রকট আকার ধারন করায় সরকার যেহেতু লকডাউন দিয়েছে সে কারণে আমার গরু কেনার মত কোনো পার্টি পাবো কি না সেটা নিয়ে হতাশায় আছি।
অন্য এক খামারি আমিনুল ইসলাম বলেন, এবার কপালে যে কী আছে তা বুঝতে পারতেছি না। ঈদের দিন ঘনিয়ে আসছে এখন পর্যন্ত বাড়িতে একজন ব্যাপারীও গরু দেখার জন্য আসে নাই, হাটেও গরুর দাম নাই। গরু বিক্রি করতে পারবো কিনা, সেই দুশ্চিন্তায় আছি । গরু তো আর বিনা খরচে লালন-পালন করা যায় না। আমার ৫টা গরু পালন করতে বহু খরচ হয়েছে। বিভিন্ন সমিতি থেকে দৈনিক কিস্তিতে লোন নিয়ে গরু পালন করতেছি। এবার যথাযথ মূল্যে গরু বিক্রি করতে না পারলে ভয়াবহ বিপদে পড়ে যাবো।
ভোলা জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ইন্দ্রজিৎ কুমার মন্ডল দৈনিক আজকের পত্রিকা কে বলেন, করোনার কারণে এবার বড় খামারিরা ৫০ শতাংশ পশু দেশের বড় বড় হাটে তুলতে পারবেন না। আর ছোট খামারিরা তো অর্থ সংকটে পড়ে আগেই স্বল্প দামে পশু বিক্রি করে দিয়েছেন। অনেক ছোট খামারির কাছে গরুই নেই। ভারতীয় গরুও আসছে না। কাজেই এবার ক্রেতাও কম, গরুও কম। এতে বাজারে ভারসাম্য থাকতে পারে। কিন্তু হাটে গরুর সংখ্যা বেশি হয়ে গেলে বাংলাদেশের খামারিরা বিপদে পড়বেন। কারণ, গত তিন মাসে খামারিদের খাবার কিনতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। দেশের বিরাজমান পরিস্থিতিতে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় পশুর হাটের সংখ্যা কমে যেতে পারে। তবে আমরা বিকল্প ব্যবস্থা চালু করেছি। ভোলা জেলায় ৮টি অনলাইনে পশুর হাট খুলেছি, সেখানে পশু বেচা-কেনা করা যাবে। ফেসবুক পেইজে গিয়ে ‘অনলাইনে পশুর হাট ভোলা ‘ নামে সার্চ করে অনলাইনে পশু বেচা-কেনা করা যাবে। আর কেউ যদি অবৈধভাবে গরু মোটাতাজাকরণ করে হাটে আনে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান এ কর্মকর্তা।
দৌলতখান পৌর মেয়র জাকির হোসেন তালুকদার বলেন, এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন হওয়ায় আগে জনস্বার্থের বিষয়টিকে প্রাধান্য দেওয়া হবে। পরিস্থিতি বিবেচনা করে হাটের সংখ্যা কমাতে হতে পারে, প্রয়োজন হলে বাড়ানো হবে। এ ক্ষেত্রে রাজস্ব আয় মূল বিষয় নয়- মুখ্য বিষয় হলো নাগরিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা ।
করোনা ভাইরাস ও সাধারণ মানুষের পকেটে টাকা না থাকার কারণে এবার পশু হাটগুলোতে ক্রেতাও কম থাকবে। কারণ, করোনার কারণে অনেক ক্রেতা হাটে যাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। আবার আর্থিক অক্ষমতার করণে পশু কেনার চিন্তাই করবেন না অনেকে।