ভোলার মনপুরার গনদাবী “ত্রাণ চাইনা, টেকসই বেড়ীবাঁধ চাই’।

DipKantha
DipKantha
প্রকাশিত: ৫:২৪ অপরাহ্ণ, জুন ২, ২০২১

 

কামরুজ্জামান//

ভোলার মুল ভুখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা মনপুরা। মনপুরা উপজেলা সুরক্ষায় ত্রাণ চাইনা, উপজেলা সুরক্ষায় দ্রুত টেকসই বেড়ীবাঁধ চাই। টেকসই বেড়ীবাঁধ নির্মানের দাবী দেড় লক্ষাধিক মানুষের। টেকসই বেড়ীবাঁধ নির্মিত না হলে বিধ্বস্ত বেড়ীবাঁধ দিয়ে বন্যা, জলোচ্ছাস, ঘূর্ণীঝড় ও প্রবল জোয়ারের সময় বেড়ীবাধ ভেঙ্গে জোয়ারের পানি ঢুকে প্লাবিত হওয়ার আশংকা রয়েছে।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি বিজড়িত মনপুরাকে রক্ষা করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদৃষ্টি কামনা করছেন মনপুরার সাধারণ মানুষ।

খোঁজ নিয়ে জানাযায়, মনপুরা উপকূলে ঘূর্ণীঝড় ইয়াসের প্রভাবে তৗব্র বাতাস ও জোয়ারের তোড়ে উপজেলার ৪ কিলোমিটার বেড়ীবাঁধ ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ক্ষতিগ্রস্থ বেড়ীবাঁধের অবস্থা খুবই নাজুক। এছাড়াও জোয়ারের তোড়ে ভেঙ্গে যাওয়া দুইটি স্থানের বেড়ীবাঁধ বালিরবস্তা ও মাটি ফেলে কোনরকম মেরামত করেছে পাউবো। যে কোন সময়ে জোয়ারের পানির তোড়ে সদ্য মেরামতকৃত ভাঙ্গা বেড়ীবাঁধ ও বিধ্বস্ত বেড়ীবাঁধ ভেঙ্গে ফের বিস্তৃর্ন এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশংকা করছেন স্থানীয়রা।

ঘূর্ণীঝড় ইয়াসের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হাজির হাট ইউনিয়নের নাজমা বেগম, জরিনা বেগম, রহিম, খলিল ও মনপুরা ইউনিয়নের লক্ষন চন্দ্র দাস, আচিরাম দাস বলেন, আমরা ত্রাণ চাইনা। আমরা টেকসই স্থায়ী বেড়ীবাঁধ চাই। আমরা মেঘনার জোয়ারে ভাসতে চাইনা , বাঁচতে চায়। আমরা আমাদের বাপ-দাদার ভীটে-মাটি হারাতে চাইনা, থাকতে চাই।

দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের মহরলাল চক্রবতী, শাহে আলম বেপারী,সাত্তার বলেন, আমরা নদী ভাঙ্গনের হাত থেকে মনপুরাকে রক্ষা করতে চাই। আমরা মেঘনায় বিলীন হতে চাইনা। মেঘনার ভাঙ্গন রোধ করে স্থায়ী ও টেকসই বেড়ীবাঁধ নির্মাণ চাই।

প্রতিবছর মেঘনার অব্যাহত ভাঙ্গনে মনপুরা উপজেলা বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। আমরা মনপুরাকে রক্ষা করতে চাই। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি বিজড়িত মনপুরায় বঙ্গবন্ধুর চিন্তানিবাস স্থাপন করে মনপুরাকে স্থায়ীভাবে ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা করে স্থায়ী ও টেকসই বেড়ীবাঁধ নির্মাণের দাবী করছেন স্থানীয়রা। উপজেলার দেড় লক্ষাধিক মানুষকে বাঁচাতে টেকসই বেড়ীবাঁধ নির্মাণের বিকল্প নেই।

সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দখো গেছে, উপজেলার ৪ টি ইউনিয়নের কমপক্ষে ১০ টি স্থানে বেড়ীবাঁধের অবস্থা নাজুক। এর মধ্যে হাজিরহাট ইউনিয়নের দাসের হাট, চৌধুরী বাজারের পূর্ব পাশ ও আঃ মান্নান মাষ্টার বাড়ী সংলগ্ন পশ্চিমের বেড়ীবাঁধ, সোনারচরের পূর্ব ও পশ্চিমের বেড়ীবাঁধ, চরফৈজুদিনের পশ্চিম পাশের ব্রিজের পাশের বেড়ীবাঁধ, মনপুরা ইউনিয়নের কূলাগাজী তালুক গ্রামের পশ্চিম পাশের বেড়ীবাঁধ, কাউয়ারটেক গ্রামের পশ্চিম পাশের বেড়ীবাঁধ, উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়নের মাষ্টারহাটের পশ্চিম পাশের বেড়ীবাঁধ ও দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের সূর্যমুখী বেড়ীবাঁধ, বাতির খাল ও ঢালী মার্কেট সংলগ্ন এলাকার বেড়ীবাঁধের সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এছাড়াও দুইটি মসজিদ ও একটি মাদ্রাসার ক্ষতি সহ ৩২০টি বাড়ী সম্পূর্ণ ক্ষতি হয়। এছাড়াও ৫০ হেক্টর শস্যক্ষেত ও ১১ কিলোমিটার পাকা সড়কের ক্ষতি হয়েছে।

এই ব্যাপারে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ ইলিয়াস মিয়া জানান, ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয় থেকে আসা ৬ শত জনকে ত্রাণ দেওয়া হয়েছে। অবশিষ্ট ক্ষতিগ্রস্থদের পর্যায়েক্রমে এই সুবিধার আওতায় আনা হবে।

এই ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ শামীম মিঞা জানান, ঘূর্ণীঝড়ে ৪ কিলোমিটার বেড়ীবাঁধ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত বেড়ীবাঁধ দিয়ে যে কোন সময় লোকালয়ে জোয়ারের পানি প্রবেশ করতে পারে। এ বিষয় পাউবো কে অবহিত করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

এই ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ডিভিশন-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ জানান, ক্ষতিগ্রস্থ ৪ কিলোমিটার বেড়ীবাঁধ আগামী আমবশ্যার পূর্বেই মেরামত করা হবে। টেকসই ও স্থায়ী বেড়ীবাধ নির্মাণের বিষয়ে আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি।