আজ বিশ্ব ” মা ” দিবস
এম মিরাজ হোসাইন//
আজ রোববার, বিশ্ব ‘মা দিবস’। পৃথিবীর মানুষ এই দিনটি উদযাপন করে পরম ভালোবাসা, শ্রদ্ধাবোধ ও গভীর মমতাবোধ নিয়ে। মা’য়ের প্রতি সন্তানের ভালোবাসা প্রকাশের বিশেষ কোনো দিনের প্রয়োজন হয় না। প্রতিটি দিন,ক্ষণ হউক মা দিবস। মা তো মা ‘ই’ তার সাথে কখনো কারো তুলনা হয় না। আর কখনো হবেও না।
পৃথিবীতে একজন মানুষের প্রতি অন্য মানুষের দয়া সহানুভূতির চেয়েও যার ভালোবাসা বেশি তিনিই হলেন মা। মা ই সন্তান কে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসেন পক্ষান্তরে পৃথিবীর সকল স্বার্থের জন্য ভালোবাসে। শত ত্যাগ ও দুঃখ-কষ্ট সহ্য করে মা বড় করে তোলেন সন্তানকে। নিজে না খেয়ে সন্তানকে খেতে দেন। মায়ের স্মৃতি বহন করেই সন্তানের বেঁচে থাকা, মায়ের একটা শরীরই হলো তার সন্তান।
নিজে শত কষ্ট সহ্য করলেও সন্তানের সামান্য কষ্ট মা সহ্য করতে পারেন না। সন্তানের প্রথম এবং সবচেয়ে বড় শিক্ষক মা। একজন মা সন্তানকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে, নিজেকে তীলে তীলে বিসর্জন দেন। একজন দক্ষ শিক্ষক দ্বারাও অসম্ভব। মা ই সন্তানের প্রথম শিক্ষক।
মায়ের হাতেই হাতেখড়ি হয় একটা সন্তানের। বয়স যতই বাড়ুক, মায়েদের কাছে তাদের সন্তান সব সময়ই ছোট থাকে। সন্তান মায়ের অনুকরণে কথা বলতে শেখে; তাই মায়ের কাছে প্রথম শেখা ভাষাকে মাতৃভাষা বলে। একজন মা সুভাষিনী হলেই সন্তানরাও মিষ্টভাষী হয়।
আমাদের করণীয়, মায়ের সঙ্গে শিশুসুলভ আচরণ করা। সুন্দর ও মার্জিত ভাষায় কথা বলা। তাদের সুখ-শান্তির জন্য আমাদের ধনসম্পদ ব্যয় করা। তাদের সঙ্গে বিনম্রভাবে চলাফেরা করা। তাদের সাথে কখনো কর্কশ ভাষায় কথা না বলা। যে কোনো বিষয়ে তাদের সঙ্গে পরামর্শ করা। তাদের সঙ্গে কর্কশ ও বিশ্রী বাক্যে কথা না বলা।
এ ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করেন, ‘আমি তো মানুষকে তার পিতা-মাতার প্রতি সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছি। জননী সন্তানকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেন এবং তার দুধ ছাড়ানো হয় দুই বছরে; সুতরাং আমার (আল্লাহর) প্রতি এবং তোমার পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। প্রত্যাবর্তন তো আমারই কাছে।’ (সুরা-৩১ লুকমান, আয়াত: ১৪)।
‘আর আমি (আল্লাহ) মানবজাতিকে নির্দেশ দিয়েছি তারা যেন তাদের পিতা-মাতার সঙ্গে সুন্দর আচরণ করে; তার মা তাকে অতিকষ্টে গর্ভে ধারণ করেছেন ও অতিকষ্টে প্রসব করেছেন এবং লালন-পালন করেছেন।’ (সুরা-৪৬ আহকাফ, আয়াত: ১৫)।
অন্যত্র আয়াতে বলা হয়েছে, ‘আর তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো, তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক কোরো না এবং পিতা-মাতার সঙ্গে সুন্দর আচরণ করো।’ (সুরা-৪ নিসা, আয়াত: ৩৬)।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে জিজ্ঞাসা করল, ‘হে আল্লাহর রাসুল! কে আমার উত্তম আচরণ পাওয়ার বেশি হকদার?’ তিনি বললেন ‘তোমার মা’; সে বলল, ‘তারপর কে?’ তিনি বললেন, ‘তোমার মা’; সে আবারও বলল, ‘তারপর কে?’ তিনি বললেন, ‘তোমার মা’। সে পুনরায় বলল, ‘এরপর কে?’ তিনি বললেন, ‘তোমার পিতা’। (বুখারি শরিফ ও মুসলিম শরিফ)। প্রিয় নবী (সা.) আরও এরশাদ করেন, ‘জান্নাত মায়ের পদতলে’। (মুসলিম)
যদিও করোনার কারণে গত বছরের মতো এবারও দিবসটিতে কোনো আনুষ্ঠানিকতা দেখা যাবে না। তাই বলে ঘরে ঘরে মায়ের ভালোবাসা কুড়াতে কার্পণ্য করবে না সুসন্তান।