আজ ১৭ই রমযান ঐতিহাসিক বদর দিবস
![](https://dipkantha.com/wp-content/uploads/2021/04/IMG_30042021_215715_622_x_420_pixel.jpg)
![](https://dipkantha.com/wp-content/plugins/print-bangla-news/assest/img/print-news.png)
এম মিরাজ হোসাইন//
আজ ১৭ই রমজান শুক্রবার। ঐতিহাসিক বদর দিবস। ৬২৪ খ্রিস্টাব্দে তথা দ্বিতীয় হিজরির ১৭ রমজানে বদর প্রান্তরে সংঘটিত হয় ঐতিহাসিক যুদ্ধ। প্রতিপক্ষ ছিল মক্কার মুশরিক ও মদিনার মুসলিম। এতে মুসলমানদের সেনা সংখ্যা ছিল মাত্র ৩১৩। এই যুদ্ধে মুসলমানরা সংখ্যায় কম হয়েও কাফিরদের বিশাল বাহিনীর ওপর বিজয় লাভ করেছে। কোরআনে এই যুদ্ধকে সত্য-মিথ্যার মধ্যে পার্থক্যকারী যুদ্ধ বলে অভিহিত করা হয়েছে। এ যুদ্ধে মুশরিক বাহিনীর ২৪ জন সর্দার মারা যান। এ যুদ্ধে ২ জন আনসার কিশোর সহোদর হযরত মাআজ (রা.) ও হযরত মুআজ (রা.) আবু জেহেলকে হত্যা করেন। সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসাউদ (রা.) আবু জেহেলের মাথা কেটে বিশ্বনবী হয়রত মুহাম্মদ (সা.)-এর নিকট হাজির করেছিলেন। ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধে মুসলিম বাহিনীর ১৪ জন শহীদ হয়েছিলেন। পক্ষান্তরে আর মুশরিক বাহিনীর ৭০ জন নিহত, ৭০ জন বন্দী হয়েছিলেন। এ জেহাদে ইসলাম ও রাসূল (সা.) এর চরম ১৪ জন শক্রর মধ্যে আবু জেহেল, উৎবা ও শায়বাসহ ১১ জনই জাহান্নামে পৌঁছে যায়। যুদ্ধ শেষে বদর প্রান্তরে নিয়ম অনুযায়ী ৩ দিন অবস্থান শেষে চতুর্থ দিনে রাসূল (সা.) মদিনার পথে যাত্রা করেছেন। এ সময় তাঁর সাথে ছিল বন্দী কোরায়েশগণ এবং গণীমতের মালামাল। আর এসবের তত্ত্বাবধানে ছিলেন হযরত আবদুল্লাহ ইবনে কা’ব (রা.)। রাসুল (সা.) ছাফরা প্রান্তরে কাফের বাহিনীর পতাকা বহনকারী নযর ইবনে হারেসকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন। বদরের যুদ্ধের গুরুত্ব: (১) এটাই ইসলামের প্রথম যুদ্ধ, মুসলমানদের ও মুশরিকদের সর্বপ্রথম মুখোমুখি সশস্ত্র সংঘর্ষ। (২) এটি ছিল ইসলামের টিকে থাকা না থাকার ফায়ছালাকারী যুদ্ধ। (৩) এটি ছিল হক ও বাতিলের পার্থক্যকারী অথচ একটি অসম যুদ্ধ। কেননা একটি সুসজ্জিত এবং সংখ্যায় তিনগুণ অধিক ও প্রশিক্ষিত সেনাদলের সাথে অপ্রস্ত্তত, অসজ্জিত এবং সংখ্যায় তিনগুণ কম এবং বাস্তভিটা হারা মুহাজির ও নওমুসলিম আনছারদের এ যুদ্ধে জয় লাভ ছিল এক অকল্পনীয় ব্যাপার। এ কারণেই এ যুদ্ধের দিনটিকে পবিত্র কুরআনে ‘ইয়াওমুল ফুরক্বান’ বা কুফর ও ইসলামের মধ্যে ‘ফায়ছালাকারী দিন’ বলে অভিহিত করা হয়েছে। (৪)‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের সাহায্য করেছেন বদরের যুদ্ধে। অথচ তোমরা ছিলে দুর্বল। অতএব আল্লাহকে ভয় কর যাতে তোমরা কৃতজ্ঞ হ’তে পার’। (৫) বদরের যুদ্ধ ছিল কাফেরদের মূল কর্তনকারী ও সত্যকে প্রতিষ্ঠা দানকারী। বদরের যুদ্ধের শিক্ষাঃ ১) মক্কায় পরিবেশ প্রতিকূলে থাকায় সেখানে সশস্ত্র যুদ্ধের অনুমতি দেওয়া হয়নি। পক্ষান্তরে মদীনায় পরিবেশ অনুকূলে থাকায় এবং এখানে সবাই রাসূলের নেতৃত্ব মেনে নিতে মৌখিক ও লিখিতভাবে অঙ্গীকারাবদ্ধ হওয়ার ফলে মুসলমানেরা চালকের আসনে থাকায় রাসূলকে সশস্ত্র যুদ্ধের অনুমতি দেওয়া হয়। এতে বুঝা যায় যে, বিজয়ের সম্ভাবনা ও পরিবেশ না থাকলে যুদ্ধের ঝুঁকি না নিয়ে ছবর করতে হবে। যেমনটি মাক্কী জীবনে করা হয়েছিল। (২) বদরের যুদ্ধ ছিল মূলতঃ আত্মরক্ষামূলক। আবূ জাহলকে বদরে মুকাবিলা না করলে সে সরাসরি মদীনায় হামলা করার দুঃসাহস দেখাত। যা ইতিপূর্বে তাদের একজন নেতা কূরয বিন জাবের ফিহরী সরাসরি মদীনার উপকণ্ঠে হামলা করে গবাদিপশু লুটে নেবার মাধ্যমে জানিয়ে গিয়েছিল। এতে বুঝা যায় যে, আত্মরক্ষা এবং ইসলামের স্বার্থ ব্যতীত অন্য কোন কারণে কাফেরদের সাথে সশস্ত্র যুদ্ধের অনুমতি নেই। (৩) সংখ্যা ও যুদ্ধ সরঞ্জামের কমবেশী বিজয়ের মাপকাঠি নয়। বরং আল্লাহর উপরে দৃঢ় ঈমান ও তাওয়াক্কুল হ’ল বিজয়ের মূল হাতিয়ার। পরামর্শ সভায় কয়েকজন ছাহাবী বাস্তব অবস্থার প্রেক্ষিতে যুদ্ধ না করে ফিরে যাবার পরামর্শ দিলে আল্লাহ ধমক দিয়ে আয়াত নাযিল করেন (আনফাল ৮/৫-৬)। এতে বুঝা যায়, আল্লাহর গায়েবী মদদ লাভই হ’ল বড় বিষয়। (৪) শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে যুদ্ধে নামলে আল্লাহ স্বীয় ফেরেশতা মন্ডলী পাঠিয়ে সরাসরি সাহায্য করে থাকেন। যেমন বদর যুদ্ধের শুরুতে রাসূলের বালু নিক্ষেপের মাধ্যমে (আনফাল ৮/১৭) অতঃপর ফেরেশতাদের সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণের মাধ্যমে সাহায্য করা হয়েছিল (আনফাল ৮/৯)। (৫) যুদ্ধে গনীমত লাভের মাধ্যমে দুনিয়া অর্জিত হ’লেও তা কখনোই মুখ্য হবে না। বরং সর্বাবস্থায় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও তাঁর নির্দেশ অনুযায়ী সেনাপতির অনুগত থাকতে হবে। বদর যুদ্ধে গনীমত বণ্টন নিয়ে বিবাদ উপস্থিত হ’লেও তা সাথে সাথে নিষ্পত্তি হয়ে যায় রাসূলের নির্দেশে এবং আয়াত নাযিলের মাধ্যমে।