বিজয়ের ৫১ বছর উদযাপিত

DipKantha
DipKantha
প্রকাশিত: ৫:৫৬ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৬, ২০২২

স্টাফ রিপোর্টার//

১৯৭১ থেকে ২০২২। বাংলাদেশের ৫১ বছরের যাত্রায় অনেক পটপরিবর্তন। ‘তলাবিহীন ঝুড়ির’ অপবাদ ঘুচিয়ে উন্নয়নের মহাসড়ক থেকে স্মার্ট রাষ্ট্র গঠনের পথে এই ব-দ্বীপ। যাদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে এই স্বাধীন ভূখণ্ড তাদের এক মুহূর্তের জন্যও ভুলে যায়নি জাতি। যে বীর সন্তানরা নতুন ভোর এনেছিলেন, তাদের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় জাতি স্মরণ করেছে মহান বিজয়ের দিন ১৬ ডিসেম্বর।

দিবসটি উপলক্ষ্যে সরকারি-বেসরকারিভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে ভোরে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে বিজয় দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়। সকাল সাড়ে ৬টায় সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে স্মৃতিস্তম্ভের বেদিতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে শুরু হয় শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন। এ সময় শহিদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। বিউগলে বেজে ওঠে করুণ সুর। পরে শেখ হাসিনা দলীয়প্রধান হিসেবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নিয়েও স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

এ সময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, ড. আব্দুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গীর কবির নানক, শাজাহান খান, আব্দুর রহমান ও কামরুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক ও আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সবুর, স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা, বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী স্মৃতিসৌধ ত্যাগ করার পর তা সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য খুলে দিলে সাধারণ মানুষের ঢল নামে। এ সময় স্পিকার, প্রধান বিচারপতি, তিন বাহিনীর প্রধান, কূটনীতিক, রাজনীতিবিদ, বীর মুক্তিযোদ্ধারা শহিদদের বেদিতে ফুলেল শ্রদ্ধা জানান।

একে একে বেদিতে শহিদ পরিবারের সন্তান ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, গণফোরাম, যুক্তফ্রন্ট, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) শহিদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানায়। এছাড়া শিল্পী-বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী, শ্রমিক আর শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত শ্রদ্ধা নিবেদনে ফুলে ফুলে ভরে ওঠে স্মৃতিসৌধের বেদি।

শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা ও বিজয় উল্লাসে জাতীয় স্মৃতিসৌধ চত্বর মুখর ছিল বিভিন্ন বয়সি মানুষের পদচারণায়। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির ধ্বংসাত্মক, নৈরাজ্যকর কর্মকাণ্ড প্রতিহত করতে নানা স্লোগান, দেশাÍবোধক গান, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ বেজে চলছিল বিরামহীনভাবে। জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে আসা জনতার এই ঢল অব্যাহত থাকে বেলা ১টা পর্যন্ত।

এ ছাড়া আওয়ামী যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ, কৃষক লীগ, যুব মহিলা লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, তাঁতী লীগ, জাতীয় পার্টি (জেপি), ছাত্র ইউনিয়ন, যুব ইউনিয়ন, গণঅধিকার পরিষদ, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানায়।

বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলা একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমি, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ-’৭১, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদসহ বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন হলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও স্মৃতিসৌধে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানায়।

এছাড়াও গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কর্নেল (অব.) ফারুক খানের নেতৃত্বে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে দলের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। রাজারবাগ স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধে শহিদ বীর পুলিশ সদস্যদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ। এতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল উপস্থিত ছিলেন। এ সময় ডিএমপির একটি চৌকশ দল গার্ড অব অনার প্রদান করে শহিদদের সম্মান জানায়।

বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে সব সরকারি-আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনায় আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা হয়। রাজধানী ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও সড়ক দ্বীপগুলো জাতীয় পতাকা ও রঙ-বেরঙের পতাকায় সাজানো হয়।

শহিদদের আত্মার শান্তি, জাতির শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামনা করে মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডাসহ সব ধর্মের উপাসনালয়ে বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। হাসপাতাল, জেলখানা, বৃদ্ধাশ্রম, এতিমখানা, শিশু পরিবার ও ভবঘুরে প্রতিষ্ঠানগুলোতে উন্নতমানের খাবার সরবরাহ করা হয়।

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বায়তুল  মোকাররম জাতীয় মসজিদে পবিত্র কোরআনখানি, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল হয়। এ সময় মহান মুক্তিযুদ্ধে শাহাদাত বরণকারী সব শহিদ এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রুহের মাগফিরাত কামনা করা হয়।

এছাড়া বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীতে বীর শহিদদের শ্রদ্ধা জানাতে সারা দেশের স্মৃতিসৌধগুলোয় ফুল, জাতীয় পতাকা, বাহুবন্ধনী ও প্ল্যাকার্ড হাতে সব বয়সি মানুষ উপস্থিত হন। বিজয়ের এ দিনে সারা দেশ ছিল উৎসবমুখর। সারা দিন শহরের পাড়া-মহল্লা, ক্লাব, হাটবাজার ও গ্রামগঞ্জে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ ও দেশাত্মবোধক গান বেজেছে। বিভিন্ন ভবনে জাতীয় পতাকা তোলা হয়। ঝাড়বাতি ও রং-বেরঙের পতাকায় ভবন, বাড়ি, সড়ক, সড়কদ্বীপ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।

রাজধানী ঢাকার হাতিরঝিল, চিড়িয়াখানা, ধানমন্ডি লেক, শাহবাগ, টিএসসি, রমনা পার্কসহ নানা জায়গায় বিজয়ের উৎসবে মেতে ওঠে নানা বয়সি মানুষ।

বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে আ.লীগের শ্রদ্ধা : মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে দলীর সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে দলের পক্ষ থেকে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান।

এ সময় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, ড. আব্দুর রাজ্জাক, শাহজাহান খান, নুরুল ইসলাম নাহিদ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, ড. হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, এসএম কামাল হোসেন, আফজাল হোসেন, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক প্রকৌশলী আবদুস সবুর, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বীর মুক্তিযোদ্ধাদের দোয়া : বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল নির্বাচন প্রস্তুতি কমিটি তেজগাঁও শাহ্পন্থী শাহ মাজার মসজিদে দোয়ার আয়োজন করে। এ সময় জাতির পিতা ও তার পরিবারের সদস্যসহ, প্রয়াত সব বীর মুক্তিযোদ্ধার আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করা হয়। পরে এতিমদের মাঝে খাবার বিতরণ করা হয়।

এর আগে বীর মুক্তিযোদ্ধারা সাভার জাতীয় সৃতিসৌধে এবং ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান। এ সময় সাবেক ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা সফিকুল বাহার মজুমদার টিপুর নেতৃত্বে কমান্ডার মোশারফ হোসেন, কমান্ডার আবুল বাসার, মো. শাহজাহান, জামাল খান, ডাক্তার রহিম, ছিদ্দিক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান’ সংগঠনের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে। এ সময় সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম নয়ন, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য গাজী এমদাদুল হক, সালমান মাহমুদ জসীম, এনামুল হক কাজল, সহ-সভাপতি আমিনুল ইসলাম রিপন, সাংগঠনিক সম্পাদক রুবিনা ইয়াসমিন অন্তরা, প্রচার সম্পাদক অনি সামদানী চৌধুরী, ক্রীড়া সম্পাদক মাসুদ রানা টগর, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সিনিয়র সহসভাপতি জাহাঙ্গীর আলম মিলন, প্রচার সম্পাদক পাকেল চন্দ্র, ঢাকা জেলা সভাপতি সানোয়ার রাসেল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।